আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মদিনায় বসবাস করা উত্তম; নাকি মক্কা মুকার্রমায় বসবাস করা উত্তম? এই শহর দুটির হারাম অঞ্চলের ভেতরে নামায পড়ার ফযীলত ছাড়া কোন কোন পার্থক্যের কারণে একটির সাথে অন্যটির ফযীলতে তারতম্য ঘটে থাকে?
মক্কার ফযীলত:
মদিনার ফযীলত:
আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
ভূমির বিবেচনায় পৃথিবীর মাঝে সর্বোত্তম ভূমি হলো মক্কা, তারপর মদিনা। আর প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য সেই নগরীতে বসবাস করা উত্তম যেখানে তার ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং যেখানে সে বেশি পরিমাণে আল্লাহর ইবাদত করতে পারে।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা রাহিমাহুল্লাহ বলেন:
‘প্রত্যেক মানুষের জন্য সর্বোত্তম যমীন হলো সেটা যেখানে সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য বেশি করে করতে পারে। এটা অবস্থাভেদে বিভিন্ন রকম হবে। মানুষ বসবাস করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট ভূমি উত্তম নয়। বরং প্রত্যেক মানুষের জন্য উত্তম হবে তার তাকওয়া, আনুগত্য, খুশু-খুযূ এবং ইবাদতের মনোযোগ অনুসারে। আবুদ-দারদা (রাঃ) সালমানকে (রাঃ) উদ্দেশ্য করে চিঠি লেখেন: ‘পবিত্র ভূমিতে চলে আস।’ সালমান (রাঃ) তাকে লেখেন: ‘কোনো ভূমি কাউকে পবিত্র করে না। বরং বান্দাকে তার আমল পবিত্র করে তোলে।’[মাজমুউল ফাতাওয়া (১৮/২৮৩) থেকে সমাপ্ত]
মদিনার তুলনায় মক্কা বেশ কিছু ফযীলতের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে, তন্মধ্যে উল্লেখ্য:
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: মক্কা বিজয়ের সময়কালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরাইশদেরকে গনীমতের সম্পদ দিলে (কিছু সংখ্যক) আনসার বলেছিলেন যে: ‘এ বড় আশ্চর্যের বিষয়। আমাদের তলোয়ার হতে কুরাইশদের রক্ত এখনও ঝরছে অথচ আমাদের গনীমতের সম্পদগুলো তাদেরকে দেয়া হচ্ছে ।’ এ কথা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পৌঁছলে তিনি আনসারদেরকে ডেকে পাঠান। বর্ণনাকারী বলেন: তিনি বললেন: ‘আমি তোমাদের ব্যাপারে যে কথাটি শুনতে পেলাম, সে কথাটি কী?’ যেহেতু তারা মিথ্যা কথা বলতেন না সেহেতু তাঁরা বলল: ‘আপনার নিকট যা পৌঁছেছে সেটাই।’ তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, লোকেরা গনীমতের মাল নিয়ে তাদের ঘরে ফিরে যাবে, আর তোমরা আল্লাহ্র রাসূলকে নিয়ে নিজ ঘরে ফিরবে। আনসারগণ যে উপত্যকা বা গিরিপথ দিয়ে চলে আমি সে উপত্যকা বা গিরিপথ দিয়েই চলব।”[বুখারী (৩৭৭৮) ও মুসলিম (১০৫৯) বর্ণনা করেন]
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমি এমন এক জনপদে হিজরত করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি, যে জনপদ অন্য সকল জনপদকে খেয়ে ফেলে। লোকেরা তাকে ইয়াসরিব বলে থাকে। এটি হল মদিনা। এটি (অবাঞ্ছিত) লোকদেরকে এমনভাবে বহিষ্কার করে দেয়, যেমনিভাবে কামারের অগ্নিচুলা লোহার মরিচা দূর করে দেয়।”[বুখারী (১৮৭১) ও মুসলিম (১৩৮২)-তে বর্ণিত আছে:]
ইমাম নববী বলেন: ‘অন্য সকল জনপদকে খেয়ে ফেলে' এর অর্থ আলেমরা দুইভাবে করেছেন। এক: সূচনালগ্নে এটি ইসলামের বাহিনীসমূহের যাত্রার প্রাণকেন্দ্র ছিল। এখান থেকেই নগরীগুলো বিজিত হয়। সেই সমস্ত নগরীর ধন-সম্পদ ও বন্দিরা মদিনায় আসে। দুই: এর খাদ্য ও জীবনোপকরণ বিজিত নগরীসমূহ থেকে আসে। সেই নগরীগুলোর গনীমত এখানে নিয়ে আসা হয়।’[ইমাম নববীর শরহে মুসলিম (৯/১৫৪) থেকে সমাপ্ত]
বুখারী (১৮৭৬) ও মুসলিম (১৪৭) সংকলন করেন: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন যে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “সাপ যেমনিভাবে তার গর্তে ফিরে আসে ঈমান তেমনিভাবে মদিনায় ফিরে আসে।”
ইমাম নববী বলেন: ‘মদিনায় ফিরে আসে' এর অর্থ হলো: সূচনায় ও সমাপ্তিতে ঈমান এই বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হবে। কারণ ইসলামের সূচনালগ্নে যাদের খাঁটি ঈমান ছিল, ইসলাম সঠিক ছিল তারা মদিনায় আসত। হয়তবা মুহাজির হিসেবে বসবাস করার জন্য, নতুবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখা, তার কাছ থেকে শেখা এবং তার সান্নিধ্য লাভ করার জন্য আসত। এরপর থেকে খলীফাদের যুগেও এমন ছিল। তাদের কাছ থেকে ন্যায়সঙ্গত জীবনযাপন শেখা এবং অধিকাংশ সাহাবীর অনুসরণ করার জন্য মানুষজন আসত। তাদের পরে ছিলেন আলেমরা, যারা নিজ যুগের আলোকবর্তিকা এবং সৎপথের ইমাম। তাদের কাছ থেকে মদিনাতে বিস্তার লাভ করা সুন্নাহ গ্রহণ করা মানুষ তাদের কাছে আসতেন। এভাবে প্রত্যেক দৃঢ় ঈমানদার এবং ঈমানে উজ্জীবিত ব্যক্তি মদিনার উদ্দেশে সফর করতেন।’[ইমাম মুসলিমের শরহে নববী থেকে সমাপ্ত]
সুতরাং আল্লাহ যাকে মক্কায় বসবাসের নিয়ামত প্রদান করেছেন তাকে অভিনন্দন। আল্লাহ যাকে মদিনায় বসবাসের নিয়ামত প্রদান করেছেন তাকে অভিনন্দন। আল্লাহর যে কোনো যমীনে আল্লাহ যাকে তাকওয়াসহ বসবাস করার নিয়ামত প্রদান করেছেন তাকেও অভিনন্দন।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।