Islam QA ওয়েবসাইটের জন্য দান করুন

আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্‌ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।

সাহায্যপ্রাপ্ত দলের বৈশিষ্ট্যসমূহ

25-04-2025

প্রশ্ন 206

একজন মুসলিমের জন্য যে জামায়াতের অনুসরণ করা শরিয়তে ওয়াজিব সেটির শর্তাবলি কী কী?

উত্তরের সংক্ষিপ্তসার:

একজন মুসলিমের উচিত সত্যের অনুসরণ করা এবং সাহায্যপ্রাপ্ত দল তথা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল-জামায়াতের সঙ্গী হওয়া, যারা নেককার সালাফের অনুসারী। সাহায্যপ্রাপ্ত দলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো: তারা হকের উপর থাকবে, তারা আল্লাহর নির্দেশের অনুসারী হবে, তারা কিয়ামত পর্যন্ত বিজয়ী থাকবে। তাছাড়া তারা ধৈর্যশীল হবে এবং ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করবে।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

একজন মুসলিমের ওপর ওয়াজিব— সত্যের অনুসরণ করা ও সাহায্যপ্রাপ্ত দল তথা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল-জামায়াতের সাথে পথ চলা, আল্লাহর জন্যই তাদেরকে ভালোবাসা তারা যেখানেই থাকুক না কেন, চাই তারা তার দেশে থাকুক কিংবা অন্য দেশে, সৎকাজ ও আল্লাহ ভীতির ক্ষেত্রে তাদেরকে সহযোগিতা করা এবং তাদের সঙ্গে থেকে আল্লাহর দ্বীনকে সাহায্য করা।

এই সাহায্যপ্রাপ্ত দলের বৈশিষ্ট্যের প্রসঙ্গে বেশ কিছু সহীহ হাদীস নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে রয়েছে:

এই সমস্ত হাদীস থেকে কয়েকটি বিষয় গ্রহণ করা যায়:

এ হাদিসের বক্তব্য অপর একটি হাদিস “আমার উম্মতের একটি দল কিয়ামতের দিন পর্যন্ত সত্যের উপর বিজয়ী থাকবে” হাদীসের বক্তব্যের সাথে কোনোভাবে সাংঘর্ষিক নয়। কারণ এ হাদিসের অর্থ হলো কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে মৃদুমন্দ বায়ু তাদের জান কবয করা পর্যন্ত তারা সত্যের উপর অটল থাকবে।

সাহায্যপ্রাপ্ত দলের বৈশিষ্ট্যসমূহ

উপর্যুক্ত হাদীসগুলোসহ অন্যান্য বর্ণনা থেকে সামগ্রিকভাবে সাহায্যপ্রাপ্ত দলের নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো নির্ণয় করা যায়:

হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে

তারা ‘সত্যের উপরে থাকবে’,

তারা ‘আল্লাহর নির্দেশের উপর অবিচল থাকবে’,

তারা ‘এই নির্দেশের উপর থাকবে’

এবং তারা ‘দ্বীনের উপর থাকবে’।

এই কথাগুলোর সম্মিলিত নির্দেশনা হলো, তারা সেই সঠিক দ্বীনের উপর অবিচল থাকবে যেটা নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

তারা আল্লাহর নির্দেশ প্রতিষ্ঠা করতে বোঝায়:

ক. অন্য সকল মানুষের তুলনায় তাদের ভিন্নতা হলো তারা আল্লাহর পথে দাওয়াতের পতাকাবাহী।

খ. তারা ‘সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধের দায়িত্ব পালনকারী’।

হাদীসে এ দলের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা হয়েছে যে: ‘তারা বিজয়ী থাকবে। এক পর্যায়ে তারা বিজয়ী থাকা অবস্থায় আল্লাহর নির্দেশ (কিয়ামত) আসবে ।’

‘তারা সত্যের উপর বিজয়ী থাকবে’ কিংবা ‘তারা বিজয়ী থাকবে সত্যের উপর’।

অথবা ‘তারা কিয়ামতের দিন পর্যন্ত বিজয়ী থাকবে’, অথবা ‘তাদের বিরোধিতাকারীদের বিপক্ষে বিজয়ী থাকবে’।

এ বিজয় দ্বারা উদ্দেশ্য হলো:

আবু সা’লাবা আল-খুশানী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের সামনে ধৈর্যের দিনগুলো রয়েছে। সেই দিনে ধৈর্য ধরা জ্বলন্ত অঙ্গার হাতে ধরে রাখার মত।”

সাহায্যপ্রাপ্ত দল কারা?

বুখারী বলেন: তারা হলেন আলেমরা।

বহু আলেম উল্লেখ করেছেন যে, সাহায্যপ্রাপ্ত দল বলতে উদ্দেশ্য: আহলুল হাদীস।

ইমাম নববী বলেন: ‘হতে পারে: এই দলটি মুমিনদের নানা প্রকারের মধ্যে ছড়ানো ছিটানো। তাদের মধ্যে রয়েছেন: সাহসী যোদ্ধা, ফকীহ, মুহাদ্দিস, দুনিয়াবিরাগী, সৎকাজের আদেশ ও মন্দকাজে নিষেধকারী। এছাড়া আরো নানান প্রকার কল্যাণ কাজে জড়িত ব্যক্তিবর্গ।’

তিনি অন্য স্থানে বলেন: ‘হতে পারে এই দলটি নানা প্রকারের মুমিনের সমন্বয়ে গঠিত। যাদের মধ্যে রয়েছে: সাহসী বীর, সমরবিদ, ফকীহ, মুহাদ্দিস, মুফাস্‌সির, সৎকাজের নির্দেশদাতা, মন্দকাজে নিষেধকারী, দুনিয়াবিরাগী ও ইবাদতগুজার।’

এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘তারা সবাই এক দেশে একত্রিত হবে এমন কোন আবশ্যকতা নেই। বরং তারা একটি স্থানে থাকতে পারে, আবার পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে পারে। তারা এক দেশে থাকতে পারে, আবার কোন দেশের কিছু অংশে থেকে অন্যান্য অংশে নাও থাকতে পারে। এমনও হতে পারে এক এক করে পুরো যমীন তাদের থেকে খালি হয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত মাত্র এক দেশে একটি মাত্র দল থাকবে। তারা বিলুপ্ত হয়ে গেলেই আল্লাহর নির্দেশ (কিয়ামত) আসবে।’

আলেমদের বক্তব্য অনুযায়ী এই দলটি মানুষদের কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অনুরূপভাবে নির্দিষ্ট কোনো অঞ্চলের মধ্যেও সীমাবন্ধ নয়। যদিও এদের সর্বশেষ অবস্থান হবে শামে (সিরিয়াতে) এবং এরা দাজ্জালের সাথে লড়াই করবে, যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভবিষ্যত বাণী করেছেন।

নিঃসন্দেহে শরয়ি ইলমধারীগণ তথা আকীদা, ফিকহ, হাদীস, তাফসীর প্রভৃতি শেখা ও শেখানো, দাওয়াত প্রদান ও প্রয়োগের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিরা সাহায্যপ্রাপ্ত দলের বৈশিষ্ট্য ধারণকারী হিসেবে গণ্য হওয়ার অগ্রাধিকার রাখে। তারাই দাওয়াত, জিহাদ, সৎকাজের নির্দেশ ও মন্দকাজে নিষেধ এবং বিদাতীদের খণ্ডন করার অধিক উপযুক্ত। কারণ এগুলো সবই হতে হবে ওহী থেকে গৃহীত সঠিক জ্ঞানের মাধ্যমে।

আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আর আমাদের নবী মুহাম্মাদের প্রতি দরূদ বর্ষিত হোক।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

বিভিন্ন মতবাদ ও ধর্ম
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব ওয়েবসাইটে দেখান