Islam QA ওয়েবসাইটের জন্য দান করুন

আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্‌ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।

আহলে বাইতের মর্যাদা কী? তারা কি কিয়ামতের দিন মানুষদের জন্য সুপারিশ করবে?

23-07-2025

প্রশ্ন 121948

অন্যান্য মানুষের উপরে আহলে বাইতের মর্যাদা কী? তারা কি কিয়ামতের দিন মানুষদের জন্য সুপারিশ করবে?  

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

(10055) নং প্রশ্নের উত্তরে আমরা বর্ণনা করেছি যে, কারা আহলে বাইত বা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশধর। ঐ উত্তরের শেষে আমরা যা বলেছি:

সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত হলো: তাঁর স্ত্রীরা, তাঁর সন্তান-সন্ততি, বনু হাশেম, বনু আব্দুল মুত্তালিব এবং তাদের আযাদকৃত দাসেরা।[সমাপ্ত]

দুই:

আল্লাহ তায়ালা নবী সাল্লাল্লাহু আলাই্হি ওয়াসাল্লামের আহলে বাইতের বহুবিধ মর্যাদা নির্ধারণ করেছেন। তাদেরকে ভালোবাসার আবশ্যকতা এবং তাদের অধিকার সংরক্ষণের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল-জামায়াত ঐকমত্য পোষণ করেছে।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা রাহিমাহুল্লাহ বলেন:

‘অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহলে বাইতের এমন কিছু অধিকার রয়েছে যেগুলো সংরক্ষণ করা ওয়াজিব। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের জন্য গনীমতের সম্পদের এক-পঞ্চমাংশে ও ফাই (বিনা যুদ্ধলব্ধ সম্পদ)-এ অধিকার নির্ধারিত রেখেছেন। আল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়ার সাথে সাথে তাদের উপরও দরূদ পাঠের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন: তোমরা বলবে: ‘হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদের প্রতি এবং তাঁর পরিবারবর্গের প্রতি রহমত নাযিল করুন যেমনিভাবে আপনি ইব্রাহীমের পরিবারের প্রতি রহমত নাযিল করেছেন, নিশ্চয় আপনি অত্যন্ত প্রশংসিত ও মহামহিমান্বিত। হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারের উপর বরকত নাযিল করুন যেমনিভাবে আপনি বরকত নাযিল করেছিলেন ইব্রাহীমের পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয় আপনি অত্যন্ত প্রশংসিত ও মহামহিমান্বিত।’[মাজমুউল ফাতাওয়া (৩/৪০৭)]

তিনি আরো বলেন: ‘অনুরূপভাবে আল্লাহর রাসূলের আহলে বাইতকে ভালোবাসা, তাদের সাথে মিত্রতা রাখা ও তাদের অধিকার সংরক্ষণ করা ওয়াজিব।’[দেখুন: মাজমুউল ফাতাওয়া (২৮/৪৯১)]

তিন:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহলে বাইতের মর্যাদাসমূহের মাঝে রয়েছে:

১. আল্লাহ তাআলা বলেন:

 يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلاً مَعْرُوفاً . وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيراً 

“হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা তো অন্য কোন নারীর মত নও। (অতএব) তোমরা যদি মুত্তাকী হয়ে থাকো, তাহলে (অন্য লোকের সাথে) নরম করে কথা বলবে না; তাতে অন্তরে ব্যাধিগ্রস্ত কোনো (পুরুষ) লোক প্রলুব্ধ হতে পারে; তবে স্বাভাবিকভাবে কথা বলবে। তোমরা তোমাদের ঘরে থাকবে এবং আগের অজ্ঞতাযুগের মতো নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত দিবে এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের কথা মেনে চলবে। হে নবী পরিবারের লোকেরা! আল্লাহ তো চান তোমাদের থেকে পঙ্কিলতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পুরোপুরি পবিত্র করতে।”[সূরা আহযাব: ৩২-৩৩]

এই মর্যাদা কেবল তাঁর স্ত্রীদের সাথে নির্দিষ্ট নয়। বরং সহীহ সুন্নাহ অনুসারে আরো কিছু ব্যক্তিও এর অন্তর্ভুক্ত:

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সকালে বের হলেন। তাঁর গায়ে ছিল কালো পশমের ডোরাকাটা চাদর। তখন হাসান ইবনে আলী (রাঃ) এলে তিনি তাঁকে চাদরের ভেতর প্রবেশ করিয়ে নিলেন। এরপর হুসাইন ইবনে ‘আলী (রাঃ) এলে তিনিও চাদরের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়লেন। এরপর ফাতিমা (রাঃ) আনহা এলে তাঁকেও ভেতরে ঢুকিয়ে ফেললেন। এরপর ‘আলী (রাঃ) এলে তাঁকেও ভেতরে ঢুকিয়ে নিলেন। তারপরে তিলাওয়াত করলেন:

إِنَّمَا يُرِيدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ البَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا

“হে আহলে বাইত! আল্লাহ তাআলা তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করে তোমাদের পুরোপুরি পবিত্র করতে চান।”[হাদীসটি মুসলিম (২৪২৪) বর্ণনা করেন]

২. আল্লাহ তাআলা বলেন:

النَّبِيُّ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ وَأَزْوَاجُهُ أُمَّهَاتُهُمْ 

“নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চেয়ে অগ্রগণ্য এবং তাঁর সহধর্মিণীরা তাদের মা সমতুল্য।”[সূরা আহযাব: ৬]

৩. ওয়াসেলা ইবনুল আসক্বা’ বলেন: আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: “আল্লাহ তাআলা ইসমাঈল-এর বংশ থেকে কিনানা গোত্রকে বংশ বেছে নিয়েছেন। কিনানাহ গোত্র থেকে কুরাইশ বংশকে বেছে নিয়েছেন। কুরাইশ বংশ থেকে হাশিম উপগোত্রকে বেছে নিয়েছেন এবং হাশিমের বংশধরদের থেকে আমাকে বেছে নিয়েছেন।”[হাদীসটি মুসলিম (২২৭৬) বর্ণনা করেন]

৪. যাইদ ইবনে আরক্বাম বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন মক্কা ও মদিনার মাঝামাঝি ‘খুম্ম’ নামক জলাশয়ের কাছে দাঁড়িয়ে আমাদের সামনে বক্তৃতা দিলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও উপদেশ শেষে ওয়ায-নসীহত করলেন। তারপর বললেন: “হুঁশিয়ার, হে লোক সকল! আমি একজন মানুষ, অতি সত্ত্বরই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ফেরেশতা আসবে, আর আমিও তাঁর আহ্বানে সাড়া দিব। আমি তোমাদের কাছে ভারী দুটো জিনিস রেখে যাচ্ছি। এর প্রথমটি হলো আল্লাহর কিতাব। এতে হিদায়াত এবং আলোকবর্তিকা আছে। অতএব তোমরা আল্লাহর কিতাবকে অনুসরণ করো, একে শক্ত করে আঁকড়ে রাখো। তারপর তিনি কুরআনের প্রতি উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিলেন। এরপর বলেন: আর দ্বিতীয়টি হলো আমার আহলে বাইত। আর আমি আহলে বাইতের বিষয়ে তোমাদেরকে আল্লাহর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি। আহলে বাইতের ব্যাপারে তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আহলে বাইতের ব্যাপারে তোমাদেরকে আল্লাহর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি।”[হাদীসটি মুসলিম (২৪০৮) বর্ণনা করেন]

এই উপদেশ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীরা সংরক্ষণ করেছিলেন। তাদের মাঝে সর্বাগ্রে ছিলেন আবু বকর সিদ্দীক ও উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুমা।

বুখারী (৩৫০৮) ও মুসলিম (১৭৫৯) বর্ণনা করেন: আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন: “যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ করে বলছি, আমার কাছে নিজের আত্মীয়তা রক্ষা করার চেয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আত্মীয়তা রক্ষা করা অধিক পছন্দনীয়।”

বুখারী তার সহীহ (৩৫০৯) গ্রন্থে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে তার এই বক্তব্যও বর্ণনা করেন: ‘তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার পরিবারের মাধ্যমে দেখে রাখবে।”

হাফেয ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহ বলেন: "মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহলে বাইতের দেখভাল করো" এ কথার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সম্বোধন করা হচ্ছে এবং তাদেরকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। কোন কিছুকে দেখে রাখার অর্থ সে জিনিসের সংরক্ষণ করা। অর্থাৎ তিনি বলেছেন: তোমরা তাদেরকে দেখে রাখার মাধ্যমে তার অধিকার সংরক্ষণ করো। তাদেরকে কষ্ট দিও না এবং তাদের সাথে মন্দ আচরণ করো না।[ফাতহুল বারী (৭/৭৯)]

আর উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহ আনহু যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আত্মীয়দের মর্যাদা সংরক্ষণ করেছেন সেটি বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশ পেয়েছে। তন্মধ্যে ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে তাদেরকে নিজের উপর ও অন্যান্য মানুষদের উপর প্রাধান্য দেয়া।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা রাহিমাহুল্লাহ বলেন:

‘অনুরূপভাবে উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন রাজস্ব বিভাগ প্রবর্তন করলেন, তখন মানুষের বংশমর্যাদা অনুসারে সেখানে তাদের নাম লিখলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটাত্মীয়দের দিয়ে তিনি শুরু করলেন। যখন আরবরা শেষ হলো তখন অনারবদের নাম তালিকাভুক্ত করলেন। অন্যান্য খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগেও এমনটি ছিল। তারপর সকল উমাইয়া খলিফা ও আব্বাসী খলিফাদের আমলে তা বহাল ছিল। পরবর্তীতে তা বদলে যায়।’[ইক্বতিদাউস সীরাত্বিল মুস্তাকীম (পৃ. ১৫৯, ১৬০)]

চার:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালআমের আহলে বাইতের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট শাফায়াত তথা সুপারিশ নেই। বরং সেটি সবার জন্য আম; আল্লাহ তাআলা নেককার, শহীদ, আলেমদের মধ্যে যার প্রতি সন্তুষ্ট তাকে সুপারিশ করার সুযোগ দিবেন। তারা আহলে-বাইতের কেউ হোক কিংবা তাদের বাইরের সাধারণ কোনো মানুষ হোক।

(21672) নং প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলেছি:

পাপী ব্যক্তিদের জন্য সুপারিশ কেবল নবী করবেন না। বরং এতে তার সাথে যুক্ত হবেন: নবীরা, শহীদরা, আলেমরা, নেককার ব্যক্তিবর্গ ও ফেরেশতারা। ব্যক্তির নেককাজ তার পক্ষে সুপারিশ করতে পারে। তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচেয়ে বেশি পরিমাণ সুপারিশ করবেন।[সমাপ্ত]

এখান থেকে ঐ সমস্ত সীমালঙ্ঘনকারী রাফেযীদের খণ্ডন জানা যায়, যারা দাবি করে সুপারিশ কেবল আহলে বাইতদের জন্য নির্দিষ্ট। বরং তাদের গ্রন্থসমূহে এটাও উল্লেখ আছে যে আহলে বাইত মানুষদেরকে জান্নাতে ও জাহান্নামে প্রবেশ করাবে! আহলে বাইতের ব্যাপারে তাদের সীমালঙ্ঘনের দীর্ঘ তালিকার মাঝে এটিও একটি। এর উৎস হলো আল্লাহ তায়ালার দ্বীনের ব্যাপারে তাদের অজ্ঞতা এবং কুরআন-সুন্নাহর ভাষ্য থেকে তাদের দূরে অবস্থান।

আমরা শাইখ আব্দুল মুহসিন ইবনে হামাদ আল-আব্বাদ আল-বদরের লেখা প্রবন্ধ ‘ফাদলু আহলিল বাইতি ওয়া-উলূয়ু মাকানাতিহিম ইন্দা আহলিস সুন্নাহ ওয়াল-জামায়াত’ পড়ার পরামর্শ দিবো। আমরা এই ফতোয়ায় উক্ত বই থেকে উপকৃত হয়েছি। বইটিতে এ বিষয়ে বিস্তর আলোচনা রয়েছে। কলেবর ছোট হলেও বইটি বেশ উপকারী। বইটি এখানে দেখুন।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

শাফায়াত ব্যক্তির মর্যাদা
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব ওয়েবসাইটে দেখান